একাত্তরের পথ দেখিয়েছে ঊনসত্তর
আবু সাঈদ খান : বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান অন্যতম মাইলফলক। উনিশ শো বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তান রাষ্ট্রকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। আর ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলায় পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামো অকার্যকর হয়ে পড়ে। বাংলার লড়াকু মানুষকে স্বাধীনতার পথ দেখায় ঊনসত্তর; যার পরিণতিতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঊনসত্তরের আন্দোলনের কাণ্ডারি। স্বৈরশাসক আইয়ুবের পতনই ছিল আন্দোলনের আশু লক্ষ্য। কেবল বাংলায় নয়, পশ্চিম পাকিস্তানেও গণসংগ্রাম হয়েছিল। তবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তা ছিল ভিন্ন মাত্রিক। এখানকার গণসংগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানের এককেন্দ্রিকতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত দিল্লি অধিবেশনে ‘এক পাকিস্তান’ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়; তাতে বাংলার অগ্রসর রাজনীতিকদের সমর্থন ছিল না। ওই অধিবেশনে প্রস্তাবটির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন নিখিল বঙ্গ মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম। ১৯৪৭ সালে মুসলিম লীগের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম, কংগ্রেসের শরৎ বসু ও কিরণ শঙ্কর রায় প্রমুখ মিলে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যকার বিরোধ মেটাতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ধারণা করা যায়, এর মূলে কাজ করেছিল মুসলিম লীগ নেতাদের একাংশের ‘এক পাকিস্তানের’ বিরুদ্ধে ক্ষোভ।
পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে কেবল ভৌগোলিক দূরত্বই ছিল না। পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ছিল সমাজ, ভাষা-সংস্কৃতি ও জীবনাচারে যোজন যোজন দূরত্ব। ব্রিটিশ ভারতে উর্দু ও হিন্দির দ্বন্দ্বে পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষার মানুষ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বরণ করে নিলেও, বাংলাভাষীরা তা মেনে নেয় না। তাই উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণায় বাংলার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়। এই সংগ্রাম ছিল এককেন্দ্রিকতার বিরুদ্ধেও। দুর্বার আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান শাসকচক্র বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি মানতে বাধ্য হলেও পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলো নিয়ে এক ইউনিট গঠন, পূর্ব বাংলার স্থলে পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ, সংখ্যাসাম্য নীতি প্রভৃতি পদক্ষেপ ছিল বাংলাকে পদানত রাখার কৌশল। এসব পদক্ষেপ যখন গ্রহণ করা হচ্ছিল, তখন বাংলার বাঘ ফজলুল হক নির্বিকার। পাকিস্তান সরকারের বদান্যতায় মন্ত্রীগিরি-গভর্নরগিরি করছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এসব পদক্ষেপের কেবল সমর্থকই ছিলেন না; প্রবক্তাও বটে। তবে পূর্ব বাংলার রাজনীতিক-বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ ছিল। প্রতিবাদী ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য বলে খ্যাত শেখ মুজিবও; যা পাকিস্তান গণপরিষদে দেওয়া তার একাধিক ভাষণে প্রতিফলিত।
তখন স্বায়ত্তশাষণের আন্দোলনের সোচ্চার ছিল মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাপ। পঞ্চাশের দশকেই আওয়ামী লীগ ভেঙে ন্যাপ প্রতিষ্ঠার মূলে ছিল স্বায়ত্তশাসন ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি প্রবর্তনের দাবি। ষাটের দশকে সেই ন্যাপ (মস্কোপন্থি ও পিকিংপন্থি) পাকিস্তানে সমাজতন্ত্র কায়েমের স্বপ্টেম্ন বিভোর হয়। তখন অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবি ৬ দফা উত্থাপন করেন; এর মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের সৃষ্ট জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটে। ছেষট্টিতে স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের, ঊনসত্তরে ৬ দফা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফায় অঙ্গীভূত হওয়ার মধ্য দিয়ে তা জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়।
ঊনসত্তরের আন্দোলন কেবল স্বায়ত্তশাসনের লড়াই ছিল না। সামরিক-কর্তৃত্ববাদবিরোধী সংগ্রাম, আর্থসামাজিক মুক্তির সংগ্রাম, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রাম, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম প্রভৃতি একরেখায় মিলেছিল। ছাত্র সমাজের ১১ দাবিতে তা সুস্পষ্ট। সংগ্রামের কাফেলায় যোগ দিয়েছিল ছাত্র, শ্রমিক, দোকানি, কেরানি, সংস্কৃতিসেবী, শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী। আন্দোলন গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। কৃষক সমাজও আন্দোলনে শরিক হয়।
পাকিস্তানের সূচনাতেই গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়। শাসন ব্যবস্থা ছিল আমলা প্রভাবিত। পাকিস্তানের দুই প্রধান নেতা মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ও লিয়াকত আলি খানের মৃত্যুর পর সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে। আমলারা রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে শরিক হন। আর ষাটের দশকের প্রাক্কালে ‘ফিল্ড মার্শাল’ আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সামরিক-স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আইয়ুবের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম ছিল আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি।
আর্থ-সামাজিক মুক্তির আকুতিও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার মুসলমানরা একযোগে পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ভেবেছিল, পাকিস্তান তাদের ভাগ্য বদলাবে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর জমিদারির অবসান হলেও সেই জমি যখন মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে চলে গেল, কৃষকের সন্তানের চাকরি মিলল না। সামরিক-বেসামরিক চাকরিতে পাকিস্তানিদের আধিপত্য কায়েম হলো। বাংলার মানুষ দেখল- করাচি, পিণ্ডি, ইসলামাবাদে আলোর ঝলকানি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা অন্ধকারেই। পশ্চিম পাকিস্তানে কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছিল। বাংলার কৃষি ও কৃষকের জীবনে পরিবর্তন এলো না। ক্রমেই পিছিয়ে পড়ল সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে অর্থনীতিবিদদের দাবি ঊনসত্তরে সাধারণের দাবিতে পরিণত হলো। জনতার সেই সংগ্রামের নিশানা হয়ে দাঁড়াল পাকিস্তানের ২২ পরিবার। তাই পাকিস্তানবিরোধী সংগ্রামে বাংলার হিন্দু-মুসলমান একাত্ম হলো। আমজনতার সঙ্গে যোগ দিল ধনিক-বণিকরাও, যারা পাকিস্তানি ধনকুবেরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছিল না।
ঊনসত্তরে আন্দোলন দুই ধারায় প্রবাহিত হয়। জাতীয়তাবাদীরা যখন বাংলার শ্রমিক, কৃষক, জোতদার, ধনিক-বণিকের মধ্যে ঐক্যের মালা গাঁথছিল, ঢাকার রাজপথে সেই ঐক্যের সুর শোনা যাচ্ছিল। স্লোগান উঠেছিল- তুমি কে আমি কে/বাঙালি বাঙালি, জাগো জাগো/বাঙালি জাগো, তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা মেঘনা যমুনা। তখন মস্কোপন্থি ও পিকিংপন্থি বামরা একযোগে স্লোগান দেয়- তোমার আমার ঠিকানা/ক্ষেত খামার কারখানা। কিন্তু জাতীয়তাবাদের ডামাডোলে এই স্লোগান তলিয়ে যায়। রাজপথের প্রধান ধ্বনি হয়ে ওঠে বাঙালির জাগরণী গান।
মস্কোপন্থি ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি তখন পাকিস্তানভিত্তিক সমাজতন্ত্র, না জাতীয় মুক্তি- এই দ্বন্দ্বে দোলায়মান। মওলানা ভাসানীর বাহুতলে অবস্থানকারী পিকিংপন্থিদের মধ্যে নানা মত। হক-তোয়াহার নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট কর্মীরা আন্দোলনের রাজপথ ছেড়ে গ্রামে চলে যান। আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকাই তাদের কাছে যৌক্তিক বিবেচিত হয়। দলটি জোতদার খতম নীতি গ্রহণ করে। আওয়াজ তোলে- নকশালবাড়ির পথ ধরো/শ্রেণি শত্রু খতম করো। যশোর, খুলনা, নোয়াখালী প্রভৃতি স্থানে জোতদারের জমি দখল, ফসল লুট, তহশিল অফিসে আগুন ইত্যাদি তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। গণআন্দোলন চলাকালে বাগেরহাটের বাহিরদিয়াতে একজন জোতদারকে হত্যা করা হয়। তখন স্লোগান দেওয়া হয়- বাহিরদিয়ার পথ ধরো/শ্রেণি শত্রু খতম করো। ঢাকা জেলার (বর্তমানে নরসিংদী জেলা) মনোহরদীর হাতিরদিয়া বাজারে হরতালকালে পুলিশের গুলিতে তিন ব্যক্তি নিহত হন। তখন স্লোগান দেওয়া হয়- ইতিহাসের দুটি নাম/হাতিরদিয়া ভিয়েতনাম।
পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তির দাবিতে যখন শহর-গ্রাম আলোড়িত, তখন জোতদার খতমের লাইন সাধারণ মানুষের কাছেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। জোতদারদের বিরুদ্ধে খুদে-মাঝারি কৃষক, বর্গাচাষিদের ক্ষোভ ছিল। তাদের কাছ থেকে জমি ছিনিয়ে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষাও ছিল। তবে তা চল্লিশ-পঞ্চাশ দশকের মতো প্রকট ছিল না। জমিদারি প্রথার অবসান, জমির মালিকানা পরিবর্তন ও কৃষি অলাভজনক হয়ে পড়ায় জোতদাররাও সংকটে পড়েছিল। তাই তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আওয়াজ ততটা সাড়া মিলে না।
গ্রামের কৃষকরা তখন শহরের আইয়ুববিরোধী লড়াইয়ের দিকে নজর রেখেছিলেন। তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছিল স্বৈরশাসকের দোসর বিডি মেম্বারদের বিরুদ্ধে। তখন ছাত্র-জনতা বিডি মেম্বারদের পাকড়াও করে দালালি না করার শপথ করিয়েছে; মুচলেকা নিয়েছে এই মর্মে যে, তারা আর পাকিস্তানি শাসকের দালালি করবেন না।
এ ছাড়া অনেক স্থানে চোর-ডাকাতদের পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে আমার এলাকার কথা উল্লেখ করতে চাই। গ্রামে গ্রামে আওয়াজ উঠল- মাতব্বরের মাতব্বরি চলবে না। সব গ্রামেই পাবলিক পার্টি গড়ে উঠল। ‘পাবলিকই’ মাতব্বরদের জিইয়ে রাখা বিচার করতে লাগল। এমন একটি সালিশি বৈঠকে আমার হাজির হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ওই বৈঠকে একাধিক পুরোনো বিরোধ মিটিয়ে ফেলা হয়। আর সেই রায় আমাকে ঘোষণা করতে হয়েছিল। কারণ তখন আমি ছাত্র আন্দোলনের কর্মী। তখন ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের প্রতি ছিল আমজনতার অগাধ আস্থা।
আমজনতার এই ঐক্য ছিল ক্ষণস্থায়ী। কিছু মাতব্বর নিজেদের পাবলিক ঘোষণা দিয়ে পাবলিক পার্টিতে যোগ দিল। মাতব্বরদের নানা ছলচাতুরীতে জোট বেশিদিন টিকল না।
ঊনসত্তরের জাগরণের ফসল যতটা জাতীয়তাবাদী আওয়ামী লীগ অনুকূলে নিতে পেরেছিল, তার দুআনিও বামরা পক্ষে নিতে পারল না। কৃষকদের মধ্যে ভাসানী ন্যাপের ব্যাপক কাজ ছিল। ঊনসত্তরে হক-তোয়াহা গ্রুপ জোতদার খতমের নীতিতে মধ্যবিত্তের সমর্থন হারাল। আর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের যুদ্ধ’ বলে জনবিচ্ছিন্ন হলো। তবে পিকিংপন্থিদের মধ্যে সিরাজ শিকদারের পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন ও কাজী জাফর, হায়দার আকবর খান রনো ও রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সমন্বয় কমিটিসহ দুই-একটি গ্রুপ জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েমই লক্ষ্য নির্ধারণ করে। তারা মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়। পথ হারাননি মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি ঊনসত্তরে অগ্রভাগে ছিলেন। আশপাশের বিপথগামীদের দূরে ঠেলে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। শেখ মুজিব বাংলার অবিসংবাদিত নেতায় আসীন হন। তাকে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু উপাধি। ঊনসত্তরের আন্দোলন আওয়ামী লীগেরও রাজনৈতিক রূপান্তর ঘটিয়েছিল। যে আওয়ামী লীগ-ছাত্র লীগের কর্মীরা একদা ছাত্র ইউনিয়নকে উপহাস করে বলত- মাও মাও চীনে যাও/ব্যাঙ খাও, সেই ছাত্রলীগ কর্মীরা ঊনসত্তরের বামদের দেওয়া স্লোগানে কণ্ঠ মিলিয়েছে, আওয়াজ তুলেছে- সংগ্রামের অপর নাম/ভিয়েতনাম কিংবা কেউ খাবে কেউ খাবে না/তা হবে না তা হবে না। তখন ছাত্রলীগের নেতারা সমাজতন্ত্রের কথাও জোরেশোরে বলতে শুরু করেছেন। যদিও ১৯৬৪ সালেই আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সমাজতন্ত্র ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি সন্নিবেশিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগে নানা মতের সমাবেশ ঘটেছিল। তবে দুটি রাজনৈতিক স্রোত লক্ষ করা যায়- ৬ দফাপন্থি ও স্বাধীনতাপন্থি। স্বাধীনতাপন্থিরা ৬ দফার আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ দিতে চেয়েছে। স্লোগান দিয়েছে- ৬ দফার আসল কথা/স্বাধীনতা। উভয় ধারাই বঙ্গবন্ধুকে নেতা মানতেন। ঊনসত্তরে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাপন্থি র্যাডিকেল ধারাটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দেশের সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তাদের সমর্থকরা জয়ী হয়। তবে স্বাধীনতার স্বপ্টম্ন তখন কেবল ছাত্রলীগের ব্যাপার থাকল না। ছাত্রলীগের ভেতরে ও বাইরে তারুণ্য হয় স্বাধীনতার স্বপ্টেম্ন উদ্ভাসিত।
ঊনসত্তরের মিছিলে কোনো কোনো যুবক আবেগে আওয়াজ তুলত- বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো। সত্তরের মার্চে তা মুক্তি-পাগল সব মানুষের কণ্ঠেই ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হলো।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যেই অঙ্কুরিত হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্নটা; যা বাস্তবায়নে একাত্তরে ছাত্র, শ্রমিক, সৈনিক, জনতা অস্ত্র হাতে নিল। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পথপ্রদর্শক।
২০২২ সালের ২৬ মার্চ সমকালে প্রকাশিত।
আবু সাঈদ খান: লেখক ও সাংবাদিক
ইমেইল : ask_bangla71@yahoo.com