দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কওমি মাদ্রাসার অবস্থান দ্বিতীয়, সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরেই অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী আছে এখানে। বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, কওমি মাদ্রাসার সব স্তর মিলে ছাত্রসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।
আড়াইশ’ বছর আগে ভারতের দেওবন্দে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশজুড়ে কওমি মাদ্রাসার বিস্তার ঘটেছিল। সে ধারা এখনও অনুসরণ করা হচ্ছে। অনুসৃত হচ্ছে সুদূর অতীতের মোল্লা নিজামউদ্দিন সাহালভী প্রবর্তিত কারিকুলাম ‘দরসে নিজামিয়া নেসাব’। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অতীতে কেবল আরবি ও ফার্সি কেতাব পড়ানো হতো, এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলোর উর্দু তরজমা পড়ানো হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরে সাধারণ শিক্ষার মতোই বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, গণিতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে বিজ্ঞান শিক্ষা এখনও উপেক্ষিত।
কিছুসংখ্যক মাদ্রাসায় প্রাথমিক স্তরে স্কুল টেক্সট বোর্ডের কারিকুলাম অনুসরণ করা হয়। বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসায় পড়ানো হয় তাদের নিজস্ব কারিকুলাম অনুযায়ী প্রণীত পুস্তকাদি। সর্ববৃহৎ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক), যার চেয়ারম্যান হচ্ছেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা শাহ আহমদ শফী। এই বোর্ডের অধীনে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ মাদ্রাসা আছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোর্ডের নিজস্ব প্রকাশনা ‘আল বেফাক পাবলিকেশনের’ বই পড়ানো হয়। এ পাঠক্রমই আজকের আলোচ্য। এই বইগুলোর সঙ্গে অন্যান্য কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ে তেমন পার্থক্য নেই। অতএব এ বইগুলোর ওপর আলোচনার মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসার প্রাথমিক পাঠক্রম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করি।
প্রথম শ্রেণীর বই ‘আদর্শ বাংলা পাঠে’র রচয়িতা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার জাহানাবাদী। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বই ‘আদর্শ বাংলা পাঠ’ ও ‘ভূগোল ও সমাজ পরিচিতি’ এবং চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ‘ইতিহাস পাঠের’ লেখক হচ্ছেন শাহ সইফ উল আলম ও মুসলিম উদ্দিন। মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বারসহ কয়েকজনকে নিয়ে এসব বইয়ের সম্পাদনা পরিষদ।
বইগুলোতে চোখ বোলালে অযত্নের ছাপ দেখা যায়। তবে এ নিবন্ধে বানান, রচনা ও সম্পাদনার মান নিয়ে আলোচনা করব না, কেবল বইগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলব।
বাংলা বইগুলো হাতে নিয়ে ভালো লেগেছে এই কারণে যে, বেশকিছু রচনা, বিশেষ করে কবিতা চয়নে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেনি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসীম উদ্দীনের লেখা কবিতা গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। প্রথম শ্রেণীর বাংলায় আছে_ রবীন্দ্রনাথের ছুটি, নজরুলের ‘ভোর হল’ এবং জসীম উদ্দীনের ‘মামার বাড়ি’। বিভিন্ন শ্রেণীতে ফররুখ আহমদ, গোলাম মোস্তফা, বন্দে আলী মিয়া, আহসান হাবীব প্রমুখের কবিতা আছে। সেই সঙ্গে আছে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘আমার পণ’ (দ্বিতীয় শ্রেণী), রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ (দ্বিতীয় শ্রেণী), নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘কাজের লোক’ (দ্বিতীয় শ্রেণী), কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ (তৃতীয় শ্রেণী), সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘রাসুলের বাণী’ (তৃতীয় শ্রেণী), কালীদাসের ‘মাতৃভক্তি’ (চতুর্থ শ্রেণী), সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘দূরের পাল্লা’ (চতুর্থ শ্রেণী), সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’ (পঞ্চম শ্রেণী) এবং সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের অনুবাদ ‘উত্তম ও মধ্যম’ (মূল- শেখ সাদী)। এসব কালজয়ী কবিতার পাশাপাশি জগদীশচন্দ্র বসু, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কামরুল হাসানের প্রবন্ধও স্থান লাভ করেছে। মাদ্রাসা পাঠক্রমে এসব বিখ্যাত শিশুতোষ রচনা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এর পাশাপাশি অখ্যাত কিছু ব্যক্তির নিম্নমানের কবিতা ও নিবন্ধ আমাকে পীড়িত করেছে। এটি সত্য যে, কবিতা চয়নে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় নেই। তবে আরও কিছু রচনা জুড়ে দিয়ে বাংলা, ভূগোল, ইতিহাসসহ সমগ্র পাঠক্রমে মুসলমানিত্বের ছাপ দেওয়া হয়েছে, যা খণ্ডিত শিক্ষা। অথচ ইসলাম পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনের তাগিদ দিয়েছে, তা নিয়ে দ্বিমতের সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, সব প্রথম সারির লেখকদের কবিতা-প্রবন্ধ থাকলেও কোনো শ্রেণীতেই স্থান পায়নি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার রচনা, স্থান পায়নি নারী অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কিত কোনো নিবন্ধ। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সংশ্লিষ্টরা নারী অধিকারের প্রতি অসংবেদনশীল।
এ বইগুলো পড়ে বোঝা যাবে না, বাংলাদেশে মুসলমান ছাড়া অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী বাস করে। এই বই কেবল মুসলমানদের মাহাত্ম্য কীর্তন করা হয়েছে। বাংলা বইগুলোতে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব বই পড়ে কেউ বাংলার মুক্তিসংগ্রামের ধারণা পাবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদের অবদানের কথা শিক্ষার্থীরা জানবে না।
ইতিহাস পর্বে ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ে কেবল মুসলমানদের অবদানকে বড় করে দেখা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণীর ইতিহাস বইতে পৃথিবীর ইতিহাসে কেবল নবীদের কথা বলা হয়েছে। এসব কিছুই খণ্ডিত ইতিহাস, যা মূল ইতিহাসে পরিণত করার চেষ্টা হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণীর ইতিহাসে বাংলায় ‘মুসলমানদের আগমন’ ও ‘মুসলিম শাসনের’ কথা বলা হয়েছে। শেষ করা হয়েছে ব্রিটিশ শাসনের অবস্থান এবং ভারত ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ঘটনা বর্ণনা করে। পঞ্চম শ্রেণীর ইতিহাসে ভারতের তুর্কি-পাঠান-মোগল শাসনের কথা বর্ণিত হয়েছে। মূল্যায়নের দৃষ্টিভঙ্গি সংকীর্ণ ও সাম্প্রদায়িক। যেমন আকবর সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর মন জয়ের নেশায় আকবর বিভ্রান্ত হন।’ (পৃষ্ঠা ২৭, ইতিহাস পাঠ, পঞ্চম শ্রেণী) অথচ আকবর তার অসাম্প্রদায়িক নীতির জন্য মহিমান্বিত। মহান সম্রাট আকবরকে ছোট করা আর আওরঙ্গজেবকে মহান করার পাকিস্তানি ধারা এই বইয়ে প্রতিফলিত।
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জানানো হয়নি_ বাংলা তথা উপমহাদেশের প্রাচীন যুগের ইতিহাস। দ্রাবিড়, আর্য-অনার্যদের ইতিহাসের অলিন্দে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়নি। পাল-মোর্য-সেন শাসন, মহেঞ্জোদারো থেকে মহাস্থানগড়-উয়ারি বটেশ্বর সভ্যতার কথা শিক্ষার্থীদের একেবারে অজানাই রয়ে গেল।
পঞ্চম শ্রেণীর ইতিহাস পাঠে ‘বাংলার জাগরণ’ অধ্যায়ের কেবল ফকির বিদ্রোহ, তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহর কথা রয়েছে। এসব আমাদের গৌরবগাথার অংশ। এ ছাড়াও অগি্নযুগের বিপ্লবীদের কথা, নীল বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ থেকে শুরু করে যেসব সংগ্রামগাথা, রাজা রামমোহন রায়-্ঈশ্বরচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে নজরুল-রোকেয়ার হাত ধরে হিন্দু-মুসলমানদের যে জাগরণ_ সবকিছুই পাঠকদের আড়ালে রয়ে গেল।
‘ইংরেজ খেদাও আন্দোলন’ অধ্যায়ে কংগ্রেসের প্রসঙ্গ এসেছে। তা ছাপিয়ে উঠেছে দেওবন্দ আন্দোলন, মুসলিম লীগের ভূমিকা_ যা নিঃসন্দেহে আমাদের ইতিহাসের অংশ। তবে সমগ্র সংগ্রামের আলোকেই এসব বিচার্য।
পঞ্চম শ্রেণীর ইতিহাস পাঠের পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম অধ্যায় পড়লে মনে হবে, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভূমিকাই মুখ্য। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ মুসলিম লীগের ভূমিকাও গৌণ করা হয়েছে, যা ইতিহাস বিকৃতির নামান্তর। তার চেয়ে আপত্তিকর ওই অধ্যায়ের শেষ দুটি লাইন, ‘১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন ও সার্বভৌম পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা এবং সেই পথ ধরেই বাংলাদেশের অভ্যুদয় প্রকৃতপক্ষে সংগ্রামরত হক্কানি উলামায়ে কিরামেরই অবদান।’
প্রথমত, পাকিস্তানের পথ ধরে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়নি। সবারই জানা, পাকিস্তান দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দ্বিজাতিতত্ত্বকে অসার প্রমাণ করে ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার ভিত্তিতে। উপেক্ষা করা হয়েছে এই জাজ্বল্যমান সত্য।
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম-পর্বে ভাষা আন্দোলন থেকে স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামের কথা নেই। আছে শুধু ‘৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা না প্রদানে অস্বীকৃতির কথা। এ আংশিক সত্য বলার মধ্য দিয়ে মনে হতে পারে, সামরিক শাসক ইয়াহিয়া পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবকে সরকার গঠন না করতে দেওয়ায় পাকিস্তান বিভক্ত হয়েছে। এটি কৌশলে ‘বাংলাদেশ খণ্ডিত পাকিস্তান’_ এমন ধারণা দেওয়ার অপচেষ্টা।
সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে ক্ষমতা প্রদানে অস্বীকার করা ঘটনার এক দিক, যা মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু সংগ্রামের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে_ সুদীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম এগিয়েছে। একাত্তরের মার্চে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর আক্রমণের মুখে নিরস্ত্র সংগ্রাম সশস্ত্র রূপ নিয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল বাংলাদেশ, যা চেতনাগতভাবে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ থেকে পৃথক। কোনো বিবেচনায়ই বাংলাদেশ খণ্ডিত পাকিস্তান নয়।
এই অধ্যায়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শব্দটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এটি কি অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি? তেমনটি মনে হয় না। এক লাইনেই অত্যাচার শব্দ বলা হয়েছে। নেই অত্যাচারের বর্ণনা। একদিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, আলবদর রাজাকার, শান্তি কমিটির অপরাধ চেপে যাওয়া হয়েছে, অন্যদিকে তুলে ধরা হয়নি সংগ্রামের ধারাবাহিক ইতিহাস ও বীর নায়কদের অবদান।
দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ‘ভূগোল ও সমাজ পরিচিতি’ আছে। এ বইয়ে ব্যাপকভাবে ইসলাম ধর্মের পরিচিতি আছে। তবে জানা যাবে না অন্য ধর্মাবলম্বীদের কথা। পঞ্চম শ্রেণীর ‘ভূগোল ও সমাজ পরিচিতি’তে ‘উপজাতি ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবনধারা’ অধ্যায় আছে। আদিবাসীদের উপজাতি বলার এই পাকিস্তানি রেওয়াজ নিন্দনীয়। ইংরেজদের দলিলপত্রের উলি্লখিত ট্রাইবাল বাংলা উপজাতি অনুবাদও যৌক্তিক নয়। ভারত ও নেপালে ট্রাইবাল সোসাইটির প্রতিশব্দ হিসেবে জনজাতি বলা হয়। কোন পণ্ডিতদের হাতে যে বিকৃত প্রতিশব্দ ‘উপজাতি’ লেখা হয়েছিল, তা জানতে এখন গবেষণার দরকার।
দ্বিতীয় শ্রেণীর ভূগোল ও সমাজ পরিচিতি বইয়ে ‘বাংলাদেশের কথা জানো’ অধ্যায়ে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারির কথা আছে। জাতীয় পতাকা ও স্মৃতিসৌধের ছবিও আছে। নেই শহীদ মিনারের কথা। জাতীয় অনুষ্ঠান অধ্যায়ে একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে পতাকা উত্তোলন করা বা অর্ধনমিত রাখার কথা আছে। কিন্তু জাতীয় সঙ্গীতের কথা কোথাও নেই। বলা হয়নি যে, সর্বস্তরের নর-নারী শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে ফুল দেয়। এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে_ স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের কথা। আরও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গও। তবে কি শহীদ মিনারের কথা, জাতীয় সঙ্গীত ও তার রচয়িতার নাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জানবে না, তারা ভাষাশহীদের উদ্দেশে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে না? তারা কি জাতীয় সঙ্গীত গাইবে না? এ ব্যাপারে অনেক মাদ্রাসার বিরুদ্ধে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন না করার অভিযোগ আছে। সে কারণে কি পাঠ্যবইয়েও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে?
তৃতীয় ও চতুর্থ ভূগোল ও সমাজ পরিচিতিতে পরিবেশ, দর্শনীয় স্থান, জেলার বিবরণ আছে। পঞ্চম শ্রেণীতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে আছে নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য। সেখানে সঙ্গতভাবে মানবাধিকার ও নারী অধিকারের প্রসঙ্গ সংযোজনের দাবি রাখে। এসব বইয়ের রচয়িতা ও সম্পাদকদের মধ্যে কূপমণ্ডূকতা ও পুরুষতান্ত্রিকতা যে কাজ করেছে তা নিয়ে দ্বিমতের সুযোগ নেই।
কওমি মাদ্রাসার পাঠক্রমের সংস্কার আজ সময়ের দাবি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এ ব্যাপারে রাষ্ট্র ও সমাজ নির্বিকার। আমাদের মনে রাখা দরকার, জ্ঞানের রাজ্যে কোনো বিভাজনরেখা টানার সুযোগ নেই। কোমলমতি শিশুদের মুক্তচিন্তায় উৎসাহিত না করলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে তারা পিছিয়ে পড়বে, এর ফলে জাতীয় অগ্রযাত্রাও হবে ব্যাহত।