বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বহুমাত্রিক। ভারত কেবল আমাদের প্রতিবেশী নয়, একই ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতা এবং প্রাকৃতিক মানচিত্রে অবিভাজ্য দুটি দেশ। উভয় দেশের মানুষ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করেছে। এর বাইরেও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের রয়েছে আরেক অধ্যায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সূর্যোদয়ে ভারত আমাদের পাশে ছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যদের রক্ত এক রেখায় মিলেছে। তাই বলা যায়, দেশ দুটি রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ।
একই রক্তের ধারা দুই দেশের নাগরিকদের মধ্যেও প্রবাহিত। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দেখা গেল_ ভাই ঢাকায়, বোন কলকাতায় থাকল। মা রাজশাহীতে, ছেলে আবাস গড়ল মুর্শিদাবাদে। \’৪৭-এর ১৪-১৫ আগস্ট ব্রিটিশ ভারত ছাড়ল। আর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লাখ লাখ পরিবার বিভক্ত হয়ে গেল।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর দিলি্লর দক্ষিণ ব্লকে বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এমনই নির্মম সত্যের অবতারণা করলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ। তিনি বললেন, তার মাতামহ ড. জাকির হোসেন ভারতে থাকলেন। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। জাকির হোসেনের ছোট ভাই ড. মাহমুদ হোসেন ঢাকায় নিবাস গড়লেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। তখন ভারতে মাহমুদ হোসেনকে বিদেশি হিসেবে দেখা হতো। সেটি ছিল জাকির হোসেনের জন্য কষ্টকর। একই বাবা-মায়ের সন্তান, একই রক্তের উত্তরাধিকারী তার সহোদর দিলি্লতে এসে বিদেশি হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছেন। ভারতের বিদগ্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও লেখক সালমান খুরশিদের কাছে বাংলাদেশ ও ভারত দুই সহোদর বা দুই সহোদরার দেশ। দেশ দুটিও ঐতিহ্য, ভাষা-সংস্কৃতি ও ভূপ্রাকৃতিক চরিত্রে দুই সহোদরা। আর দেশ দুটির মধ্যে সমস্যাও দুই সহোদরার মধ্যকার সমস্যা। এ দৃষ্টিতে দেখলে সমাধানের পথও সহজ হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে কি সেভাবে দেখা হচ্ছে?
প্রথমেই দুই দেশের মধ্যকার সমস্যা বা বিরোধগুলোর দিকে চোখ দেওয়া যাক। সবারই জানা, দুই দেশের মধ্য দিয়ে ৫৪টি নদী প্রবাহিত। ভাটিতে বাংলাদেশ, উজানে ভারত। বিভিন্ন সময়ে উজানে বাঁধ দিয়ে নদীগুলো থেকে পানি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে \’৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর একটি সমঝোতায় আসা উচিত ছিল। কিন্তু আমাদের মাথার ওপর তখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এটি তাদের কাছে তেমন গুরুত্ব পায়নি।
পক্ষান্তরে ভারতের জন্য সমস্যা হয়ে আছে উত্তর-পূর্বের দেশগুলোর সঙ্গে মূলখণ্ডের যোগাযোগের সমস্যা। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের দুই অংশের সড়ক ও নৌ-যোগাযোগের যে সুযোগ ছিল তা বন্ধ হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়।
উভয় দেশের জন্য অপর সমস্যা সিটমহল। বাংলাদেশে ভারতের এবং ভারতে বাংলাদেশের মালিকানাধীন ছিটমহল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কার্যত ছিটমহলগুলোর নর-নারীরা রাষ্ট্রবিহীন মানুষ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ছিটমহলগুলোর ভারতীয় নাগরিক বলে পরিচিত নর-নারী বাংলাদেশের জনস্রোতে মিশে আছে। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে ছিটমহলগুলোতে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভারতের জনস্রোতে মিশে আছে। কিন্তু উভয় অংশের ছিটমহলবাসী ভোটাধিকারসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
অন্য সমস্যাগুলো হচ্ছে_ সীমান্ত সংঘর্ষ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার এবং দুই দেশের মধ্যে অসম বাণিজ্য। এসব সমস্যা বা বিরোধ সমাধানে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ দুটির মধ্যে যে আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকা উচিত ছিল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা হয়নি। বরং ভুল রাজনীতি ও সংকীর্ণ স্বার্থের খেলায় সমস্যাগুলো জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে।
পাকিস্তান আমল থেকে দেখে আসছি_ রাজনীতিতে ভারতবিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতা লালন করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার অবসান হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং ১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি নতুন করে ভারত ও সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক উদ্যোগ না নিয়ে এক ধরনের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের বিজেপিসহ সাম্প্রদায়িক দলগুলো বাংলাদেশবিদ্বেষ ছড়িয়ে চলেছে। সম্প্রতি এর সঙ্গে সুর মিলিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই ভ্রান্ত রাজনীতি দুই দেশের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে।
লক্ষণীয় যে, সমস্যাগুলো সমাধানে যে উদ্যোগী ভূমিকা এবং কূটনৈতিক তৎপরতা দরকার ছিল_ বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করতে পারেনি। অন্যদিকে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের পক্ষ থেকে উদার মনোভাবের পরিচয় দেওয়ার কথা হয়নি। বরং দেশটির আচরণে কখনও কখনও বড় ভাইসুলভ মনোভাবেরই পরিচয় মিলেছে। এখানে আকারে বড় বা শক্তিমান হওয়ার বিষয় নয়। প্রতিবেশী হিসেবে উচিত একে অন্যকে সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা। আমরা আই কে গুজরালের ডকট্রিনে এমন প্রতিবেশীসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির কথাই শুনতে পাই। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বিভিন্ন উক্তির মধ্যে সহমর্মিতার কথাই প্রকাশিত হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বরের সালমান খুরশিদের কথাতে এই মনোভাব লক্ষ্য করেছি। কিন্তু বাস্তব সত্য_ সমাধানের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, বিলম্বিত হচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যকার সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না এলেও ইতিপূর্বে দুটি মাইলফলক লক্ষণীয়। প্রথমত, ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত (ল্যান্ড বাউন্ডারি) সংক্রান্ত মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি এবং ১৯৯৭ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি। তিস্তা চুক্তি ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ট্রানজিট প্রদানের মধ্য দিয়ে আরেকটি নতুন মাইলফলক যুক্ত হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হাসিনা-মনমোহনের বৈঠকে। যা না হওয়ায় বাংলাদেশ হতাশ হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলার মাটি ব্যবহার না করার কার্যকর উদ্যোগ এবং উত্তর-পূর্বাংশের সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের ট্রানজিট প্রদানেও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। অথচ ভারত সরকারের প্রতিশ্রুত তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তি ঝুলে আছে এখনও। এ ব্যাপারে বিরোধী মনোভাব পোষণ করছে বিজেপি ও তার সহযোগীরা, তার চেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। দিলি্লতে কারও কারও উল্টো যুক্তি শুনেছি। সেটি হলো_ তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন হলে আপনারা কতটুকু পানি পাবেন? এটি ঠিক, তিস্তার চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ খুব বেশি পানি পাবে না। তবে গঙ্গা চুক্তির পরে তিস্তা চুক্তি হবে এক ধাপ অগ্রগতি। এ ধারাবাহিকতায় অন্যান্য নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রেও উভয় দেশকে ন্যায্যতার নীতি গ্রহণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সালমান খুরশিদের বক্তব্য যৌক্তিক। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন_ \’ভারত বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু করবে না। ভারত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র করলে সেখানে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে।\’ তিনি নদীগুলোতে পানির প্রবাহ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে নদীর উৎসমুখের দেশ চীন ও নেপালকে যুক্ত করে পানি সংরক্ষণের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। আজ সেটি ভারত উপলব্ধি করছে, এটি আশার কথা। সেই বহুপক্ষীয় উদ্যোগের পাশাপাশি ৫৪টি নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতকে সহমতে আসতে হবে। সেটি কেবল বাংলাদেশের স্বার্থে নয়, উভয় দেশের স্বার্থেই তা জরুরি। এখানে বলা আবশ্যক, পানির অভাবে সিলেটে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে আসাম কি রক্ষা পাবে? রাজশাহীতে মরু প্রক্রিয়া দেখা দিলে তা কি মুর্শিদাবাদে ছড়াবে না? বাংলাদেশের সুন্দরবন ধ্বংস হলে সুন্দরবনের ভারতের অংশ কি অক্ষত থাকবে?
প্রকৃতিবিদরা বলছেন, নদীর ভাটি শুকিয়ে গেলে উজানেও তার প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। তাই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিধ্বংসী বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে মণিপুর, আসাম, পশ্চিমবঙ্গে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পরিবেশকর্মীসহ সচেতন জনগোষ্ঠী। তাদের দাবিই বাংলাদেশে মানুষের প্রাণের আকুতি। তাই উভয় দেশের সুদূরপ্রসারী স্বার্থই আজ সব নদীর প্রবাহ বেগবান রাখতে হবে।
১৭ সেপ্টেম্বরের সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপকালে সালমান খুরশিদ বলেছেন, তিস্তার চুক্তি বিলম্বিত হলেও তিস্তার পানি থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে না। এ প্রতিশ্রুতির জন্য অভিনন্দন। তবে আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ ৫৪টি অবিভক্ত নদীর প্রবাহ থেকে বঞ্চিত হবে না।
ছিটমহলবাসীর মানবিক জীবন নিশ্চিত করতেই মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনে এটি পাস হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ ব্যাপারে হীন রাজনীতি কাম্য নয়। ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কি দয়া করে ছিটমহলবাসীর কথা শুনবেন? উভয় অংশের ছিটমহলবাসী এ চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছে। তাদের মানবিক অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন_ সেটিই প্রত্যাশিত।
এটি হৃদয়বিদারক, সীমান্তে রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে না। বিএসএফের গুলিতে নিরীহ বাংলাদেশের নর-নারী প্রাণ হারাচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, একদা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। আজ সেখানে সীমান্তে কোনো বাধা নেই। এক দেশের মানুষ নির্বিঘ্নে আরেক দেশে যেতে পারে। আর সহোদরা দুই দেশের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া, কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর লাশ। এ ব্যাপারে আমরা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আমরা আকর্ষণ করেছিলাম। তিনিও মর্মাহত। সীমান্তে রক্তপাত তাদের কাম্য নয়। শান্তিপূর্ণ সীমান্তের জন্য আমরা সীমান্ত হাটের পাশাপাশি সীমান্তে বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করি। আমরা বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি গেট থাকবে। একটি দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করবে। অপরটি দিয়ে ভারতের শিক্ষার্থীরা আসবে। একই সঙ্গে পড়বে, মতবিনিময় করবে। একইভাবে নো-ম্যানস ল্যান্ডের ওপর প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে দুই দেশের রোগীরা চিকিৎসা নেবে। তিনি এটিকে চমৎকার করে বর্ণনা করে বলেন, \’এসব উদ্যোগের কথা ভাবতে হবে। এমন একদিন আসবে, সীমান্তে আর কোনো বাধা থাকবে না।\’ এটি আমাদেরও স্বপ্ন। কিন্তু সেদিন কতদূর?
এটি আমার কথা যে, উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বেড়ে চলেছে। ভারত এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়ী অংশীদার। ২০১১-১২ সালে ভারত বাংলাদেশে ৫.৮৪ বিলিয়ন ডলার রফতানি করেছে। সে ক্ষেত্রে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি ৫০০ মিলিয়ন মাত্র। বাংলাদেশের পক্ষে রফতানি বাড়ানো অসাধ্য নয়। ভারতে অনুষ্ঠিত একাধিক বাংলাদেশি মেলায় দেখা গেছে_ বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা প্রচুর। ইতিমধ্যে সাপটার আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশের অধিকার লাভ করেছে। কিন্তু সে তুলনায় অগ্রগতি হয়নি। ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশের রফতানি ৪৯৮ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০১২-১৩ সালে ৫৬৩ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। এটি আরও হতে পারত। কিন্তু প্যারাট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধায় তা বিঘি্নত। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশকে তৈরি পোশাক ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়া সত্ত্বেও প্রায় ১৫ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে। তদুপরি আছে নন-ট্যারিফ বাধা। সহজে আমদানিকৃত পণ্যের ছাড়পত্র মেলে না। সাবান, খাদ্যদ্রব্য, জামদানি, তৈরি পোশাকের টেস্ট সার্টিফিকেট পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের টেস্ট সার্টিফিকেট অনুমোদন করছে না। সে ক্ষেত্রে সীমান্তে পরীক্ষার ব্যবস্থার জন্য যৌথ ল্যাবরেটরি থাকতে পারে। এটিসহ রফতানি সহজলভ্য করার একাধিক প্রস্তাব বাংলাদেশের রয়েছে, যা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বিবেচনার অপেক্ষায়।
পরিশেষে যেটি বলা প্রয়োজন মনে করছি, পশ্চিমবঙ্গ আমাদের নিকটতম। আমরা একই ভাষায় কথা বলি। অভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা জানি না, তিনি কেন মুখ ঘুরিয়ে আছেন। স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনে অনীহা দেখাচ্ছেন, তিস্তার জলের ন্যায্য হিস্যা দিতে আপত্তি করছেন। কিন্তু কেন? শুধু তাই নয়, আড়াই বছর ধরে কলকাতার দূতাবাসে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম তার সাক্ষাৎকার চেয়ে আসছেন। এতটুটু সৌজন্য দেখাতেও তিনি নারাজ।