রাজনীতির কালাকাল গ্রন্থের সমালোচনা
সৈয়দ আবুল মকসুদ
আবু সাঈদ খানের দুটি সত্তা : একদিকে তিনি একজন রাজনীতির মানুষ, অন্যদিকে তিনি সংবাদপত্রের একজন উপ-সম্পাদকীয় লেখক অর্থাৎ রাজনৈতিক ভাষ্যকার। যদিও রাজনীতি না করেও রাজনীতির ভাষ্যকার হওয়া যায়, কিন্তু দেশের অতীত ও বর্তমানকালের রাজনীতির বাস্তব জ্ঞান থাকায় রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর লেখার উপজীব্য প্রাণবন্ত ও বাস্তবসম্মত- উপদেশমূলক নয়। প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে যাঁরা জড়িত থেকে রাজনীতি নিয়ে লেখেন তাঁদের লেখার মূল্য বেশি।আবু সাঈদ খান প্রথমে জাতীয়তাবাদী ও পরে সমাজবাদী রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। বস্তুত তিনি গণতান্ত্রিক রাজনীতির একজন অবিচল সমর্থক। বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের তিনি ছিলেন ষাটের দশকে একজন সক্রিয় কর্মী, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং স্বাধীনতার পরে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মনিয়োগ করেন। রাজনীতির কালাকাল- এ সংকলিত ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য রচনায় আবু সাঈদ খান বাংলাদেশের অতীত ও বর্তমান রাজনীতির শক্তি ও দুর্বলতা আলোচনা করেছেন। কোনো দলের প্রতি সমর্থন তাঁর থাকতে পারে, কিন্তু লেখার সময় তিনি দলনিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর থাকেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো তিনি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন অতি সংক্ষেপে। একটি গণতান্ত্রিক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনায় তাঁর আস্থা রয়েছে। তবে দেশের অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে তিনি আপসহীন। তাদের প্রতি রাষ্ট্র যে অবিচার করেছে তাতে তিনি ক্ষুব্ধ।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বাইরে রাজনীতিকদের সম্পর্কে কৌতুকজনক বিষয়েও রয়েছে কয়েকটি আলোচনা। সেগুলোর শিরোনামই জানিয়ে দেয় তাদের বিষয়বস্তু, যেমন- রাজনীতিকদের সুবচন-কুবচন, রাজনীতিকের পোশাক-পোশাকি রাজনীতি এবং রাজনৈতিক খেতাব-খেতাবি রাজনীতিক।
শুধু স্বদেশের কথা নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে রয়েছে বিচার-বিশ্লেষণ। পশ্চিমবঙ্গে বাম রাজনীতির সাফল্য, নেপালে কমিউনিস্টদের।
ইতিহাসসচেতন তরুণ পাঠকরা এ বই পাঠ করে উপকৃত হবেন, বিদগ্ধ পাঠকদের জন্যও পাঠ্যবস্তু।
প্রকাশক : আকাশ প্রকাশনী
সূত্র, কালের খেয়া, সমকাল